মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জগন্নাথপুরে হারানো লাখ টাকা খুঁজে উদ্ধার করে দিল থানা পুলিশ জগন্নাথপুরে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধন রানীগঞ্জ সেতুর পাশ থেকে বালু উত্তোলন- ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে প্রতিবেদন দিতে আদালতের নির্দেশ জগন্নাথপুরে ধান চাল ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন: লটারির মাধ্যমে মনোনীত ৮১০ ভাগ্যবান কৃষক জগন্নাথপুর পৌরশহরে ৩৫ দোকানঘর  ভাড়া থানায় দিলেন ব্যবসায়ী গন জগন্নাথপুরে চুরি যাওয়া ৩টি টমটম উদ্ধার : গ্রেপ্তার ৪  জগন্নাথপুর পৌরশহরে ৫৫ দোকানঘর  ভাড়া থানায় দেওয়ার নির্দেশ পুলিশের জগন্নাথপুরে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ও নির্ধারিত তারিখে দোকানঘর  নিলাম হয়নি!   সাংবাদিক শংকর রায়ের মৃত্যু তে প্রবাসী  সাংবাদিক তৌফিক আলী মিনার এর শোক জগন্নাথপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শংকর রায় আর নেই: প্রেসক্লাবের শোক

জগন্নাথপুরে পানিতে শিশু নিহতের তিনমাস পর আদালতে মামলা : হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার অভিযোগ আসামীদের

জগন্নাথপুরে পানিতে শিশু নিহতের তিনমাস পর আদালতে মামলা : হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলার অভিযোগ আসামীদের

স্টাফ রিপোর্টার ::  সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর আট বছরের শিশু পানিতে পড়ে নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা হত্যা মামলার আতংকে ভুগছেন  প্রতিপক্ষ ১৩ ব্যক্তি। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শিশুর সলিল সমাধির ঘটনার দীর্ঘ ৩ মাস পর এমন মামলার আসামী হয়েছেন বলে দাবি করছেন তারা।  এমতাবস্থায় স্থানীয় সচেতন জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি ও মামলার আসামীরা সঠিক তদন্তে  এ মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার  পশ্চিম ভবানীপুর নিবাসী আমির খানের ছেলে মো: সোহাগ হাসান (৮) গত ১ জুন ২৭ শে রমজান ইফতারের নিকটবর্তী সময়ে বাড়ি থেকে আর ফিরেনি। পরদিন সকালে বাড়ির পাশ^বর্তী  ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে ডোবাতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর নিহত শিশুর মা সুজিয়া বেগম বাদি হয়ে একই গ্রামের  ১৩ জনকে আসামী করে সুনামগঞ্জ  চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরে আদালত অভিযোগখানা গ্রহণ করে জগন্নাথপুর থানায় প্রেরণ করেন। এবং জগন্নাথপুর থানায় এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়েছে কিনা সেই সংক্রান্ত প্রতিবেদন ধার্য্য তারিখের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

আলোচিত এই হত্যার অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিপক কান্তি গোপকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘‘নিহত ছেলেটি পানিতে পড়ে মারা গেছে। লাশের সন্ধান পাওয়ার পর পরিবারের সবাই গ্রামবাসীর সামনে বলেন, ছেলেটি সাঁতার জানতোনা। তাই পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। আমাদের কারো ওপর কোনো প্রকার অভিযোগ নেই।  এ সময় ছেলেটির বাবা  গ্রামবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি গরীব ও  অসহায় লোক। সবাই মিলেমিশে আমাকে সাহায্য ও সহযোগিতা করে আমার ছেলেকে দাফন সম্পন্ন করুন। পরে গ্রামবাসী মিলে দাফন সম্পন্ন করা হয়।’’

দাফনের তিনমাস পর নিহতের মা বাদি হয়ে  গ্রামের ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এ অভিযোগের বিষয়ে গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বী ও জগন্নাথপুর  বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আফসর উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ছেলেটির পিতা আক্রোশবশত: গ্রামের কিছু মানুষকে আসামী করে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তার ছেলেটি পানিতে পড়ে মারা গেছে; কিন্তু এখন গ্রামের কিছু মানুষকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্রমূলক এ  মিথ্যা মামলা করেছে।

হত্যার অভিযোগকারী  নিহতের মাতা মোছা: সুজিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন, ‘‘গত রমজানে আমার ছেলে সোহাগ হাসান ইফতার করতে মসজিদে যাওয়ার পর আর বাড়ীতে ফিরে না আসায় অনেক খোঁজাখুজি করে তাকে পাইনি। পরদিন ভোরে মাঠের এক ডোবায় গ্রামের দু’ একজন লোক তার মরদেহ দেখতে পেয়ে আমাদেরকে জানালে আমরা তার লাশ সেখান থেকে বাড়িতে নিয়ে আসি। তখন আমাদের মন ভালো ছিলনা।

কাউন্সিলর দিপক কান্তি গোপ  ও গ্রামের হাফিজ নামের এক ব্যক্তি থানার সাথে যোগাযোগ করে দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা বলেছি, যদি কোনোদিন রহস্য উদঘাটন হয় তখন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো। তিনি এ ও বলেন,  বিবাদী নানু  আমার আরেক ছেলে বাজারে যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে টেনেহেচড়ে নামায় এবং তার পরনের প্যান্ট খুঁলে বলে তোর এক ভাইকে মেরেছি, এখন তোরে মারলে আমাদের কিছু হবেনা। একথা শুনে আমি আদালতে মামলা দায়ের করি।’’

হত্যার অভিযোগের প্রধান আসামী ছমির উদ্দিন বলেন, আমি গত পৌরসভা নির্বাচনে ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেছি। ওই নির্বাচনে নিহত ছেলের পিতা আমির খান  প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার করেছে।  এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অগ্রনী ভ’মিকা রেখে থাকি এবং অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। নিহত ছেলের পিতার ঘরে সবসময় অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকে।  আমি তার প্রতিবাদ করায় সে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। তার আক্রোশতার জাল থেকে বাঁচতে পারেনি ছয়মাস পূর্বে প্রবাসে অবস্থানরত মৃত আব্দুল মোমিনের ছেলে রনি মিয়া। বাদী অভিযোগে উল্লেখ করে ২ নং আসামী রনি মিয়া আমার ছেলেকে স্কুলের দিকে নিয়ে গেছে। সে  বিদেশে থেকে কিভাবে স্কুলের দিকে নিয়ে গেল? এটাই আল্লাহর পক্ষ হইতে সত্য ও মিথ্যার জ্বলন্ত প্রমাণ।

মামলার আরেক আসামী লিফটন দাস  জানান, নিহতের পিতা আমির খানের সাথে ভ’মি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আদালতে আমাদের সাথে মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে। এর আক্রোশে আমি ও আমার পরিবারের লোকদের সহ অনেককে আসামী করেছে। বাদির স্বামী আমির খান সমাজের অত্যান্ত খারাপ লোক। তার ঘরে সবসময় মদ, গাঁজা, জুয়া সহ অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকে। আমরা পাশ্ববর্তী হওয়ায় গ্রামের কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য লোকদেরকে দেখাইয়া থাকি। এরই আক্রোশে আমাদেরকে আসামী দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মইন উদ্দিন জানান, ২৭ রমজানে ছেলেটির খোঁজ না পেয়ে সোহাগ হোসেন হারিয়েছে মর্মে মসজিদের মাইকে এলার্ন দেওয়া হয় এবং তার পরিবার থেকে বলা হয়, নিহত ছেলেটি সাঁতার জানতোনা। পরদিন শুনি ছেলেটি পানিতে ডুবে মারা গেছে। ছেলেটির পিতা সমাজের একজন খারাপ লোক ও মামলাবাজ। তার বাড়িতে মদ,গাঁজার আসর সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ করে থাকে। এবং গ্রামের বিভিন্ন মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে, এমনকি সে গ্রামের মসজিদের উপরে ও মামলা দেওয়ার প্রমাণ আছে।

হত্যা মামলার অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার এসআই আফছার বলেন, অভিযোগটির তদন্ত চলছে।

 

 

 

 

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com